চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে আমন ধানের চাষ হয়েছে মোট ৩৬৬৩ হেক্টর জমিতে। গত মাসের টানা বৃষ্টির কারনে এসব জমির অধিকাংশ ধান তলিয়ে গেলেও বৃষ্টি থামার সাথে সাথে জমি থেকে পানি নেমে তলিয়ে যাওয়া এসব ধান দৃশ্যমান হয়েছে। কৃষক কৃষানির অক্লান্ত পরিশ্রম আর সঠিক পরিচর্যায় মাঠের সবুজ প্রকৃতিতে ধরেছে সোনালী রং। কিন্তু কৃষাণির সোনাঝরা ধানের স্বপ্নের ঘরে এবার হানা দিয়েছে সর্বনাশা ইঁদুর। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানূযায়ী চলতি আমন মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রায় ২০শতাংশ ধান কেটে নষ্ট করছে ইঁদুর। যা ঈশ্বরদী উপজেলার আমনের মোট লক্ষ মাত্রার মধ্যে প্রায় ৫৫৬৮ মেট্রিকটন ধান।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদী উপজেলায় মোট আমনের চাষ হয়েছে ৩৬৬৩ হেক্টর জমিতে। চাষ হওয়া মোট জমি থেকে আমনের সংগৃহীত লক্ষমাত্রা ছিল ২৭৮৩৯ (সাতাশ হাজার আটশত উনচল্লিশ) মেট্টিক টন। যার ২০ শতাংশ হারে নষ্ট করছে ইঁদুর। সেই হারে মোট লক্ষমাত্রর চেয়ে প্রায় ৫৫৬৮ মেট্রিকটন ধান নষ্ট করছে ইঁদুর।
ঈশ্বরদী উপজেলার আমন প্রধান এলাকা গুলোর মধ্যে বিশেষ করে, মুলাডুলি, পতিরাজপুর, বাঘহাছলা, অরণকোলা মাঠ গুলো ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে আলাপ কালে ধানের জমি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর নানা কৌশল প্রয়োগ করতে দেখো গেছে।
আমন চাষী মো: মিনাজ বলেন, আমি সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কিন্তু বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেলেও ইঁদুর থেকে রক্ষার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। আমার একাধিক জমির প্রায় অর্ধেক ধান ইঁদুর কেটে সাবার করে দিয়েছে। কাটার উপযোগী না হওয়ায় কাটতেও পারছি না।
চাষী আলতাব বলেন, গ্যাস ট্যাবলেট, বিষ ট্যাবলেট দিয়েও কোন ভাবেই ইঁদুরের কবল থেকে ধান গুলো রক্ষা করতে পারছিনা। যে যা বলছে পাাগলের মত তাই করছি তবুও ইঁদুর থেকে রেহাই হচ্ছে না কোন ভাবেই। জানিনা ৪ বিঘা জমি থেকে কতটুকু ধান বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব।
ধানের জমিতে ইঁদুরের গর্তে কলার গাছ পুতে দেওয়া আব্দুর জব্বার বলেন, সকল প্রকার বিষ দিয়েও কোন সুফল পাইনি। ইঁদুরের কাছে আমরা হেরে যাচ্ছি। কষ্টে ফলানো ফসলের কতটুকু ঘরে নিতে পারব সেটাই এখন বড় দুঃশ্চিন্তা।
ইঁদুরের উপর রাগ করে আধাপাক ধান কর্তন কারী কৃষক মুনতাজ বাবু বলেন, কৃষি বিপনি বিতান থেকে নানা প্রকার ইঁদুর মারা বিষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়ও অবলম্বন করেছি। তবুও ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পারি নাই। ইঁদুর তাড়াতে জমিতে কলা পাতা, পলিথিন ও দিয়েছি তবুও আমার জমির প্রায় অর্ধেক ধান কেটে শেষ করেছে ইঁদুর। তাই বাকি টুকু নিজেই কেটে নিচ্ছি। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার বলেন, অত্রাঞ্চালে ইঁদুরের অত্যাচারটা তুলনা মূলক ভাবে একটু বেশী হয়। আমরা কৃষকদের ইঁদুর নিধনের জন্য সর্বদা নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি। শুধু তাই নয় এ অঞ্চলের কৃষকদের কে ইঁদুর মারার জন্য পুরুষ্কৃত করা হয়। এছাড়া বিষ ট্যাবলেট, বিষ টোপসহ কৃষকদের নানা উপকরণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয় ইঁদুর মারতে। এ বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ধান কেটে নষ্ট করছে ইঁদুর। যা কৃষকদের জন্য একটি বড় ধরনের প্রতিকূলতা। আমন ধান এবং শীত কালীন গম’এ ইঁদুর সবচে বেশী ভয়াবহতা দেখায়। তবে ইঁদুরের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ইঁদুর মারার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।