মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে ঈশ্বরদীর চাষীদের জুড়িমেলা দায়। তার সাথে এবার বাড়তি প্রেরণা জুগিয়েছে দেশের বাজারে বছরজুড়ে পেঁয়াজের হাহাকার, সেই সাথে দামের উর্দ্ধমূখীতা। সব মিলিয়ে পুরো উপজেলার মাঠ জুঁড়ে চলছে পেঁয়াজ চাষের মহোৎসব। বৈরী আবহাওয়া জনিত কারনে আগাম পেঁয়াজ চাষীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নাবি পেঁয়াজ করে রোপন করেছেন অনেকেই। তবে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের অসহযোগীতা মৌসুমি পেঁয়াজ চাষীদের সফলতার পথে সবচে বড়বাধা বলে অধিকাংশ কৃষকই তাদের অভিমত প্রকাশ করেন।
উপজেলার লক্ষীকুন্ডা, কৈকুন্ডাসহ প্রমত্তা পদ্মার বিস্তৃর্ণচর, ভাড়ইমারী, সিলিমপুর,নওদাপাড়া এলাকা ঘুরে পেঁয়াজ চাষীদের নানা কর্মযজ্ঞ দেখা যায়।
পেঁয়াজের মাঠে কাজ করা শ্রমিক মজিদ মিঞা বলেন, পেঁয়াজের মৌসুমে আমাদের কদর একটু বেশীই থাকে। কারণ পেঁয়াজ অত্যন্ত নরম জাতীয় ফসল। তাই একে অতিআদরের সহিত বাড়তি সময় নিয়ে আগাছা পরিষ্কার সহ যাবতীয় কাজ করতে হয়। নইলে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। এসময় আমরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরী নিয়ে থাকি।
পেঁয়াজ চাষীদের তথ্যমতে, পেঁয়াজ রোপন থেকে বাজার জাত করণ পর্যন্ত সময় লাগে ৬০/৭০ দিন। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় ৫০/৬০ মণ হারে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। আবার প্রতি বিঘায় উৎপাদন ব্যয় হয় প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।
কৃষক মাহাবুব বলেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার পেঁয়াজচাষে খরচ বেশী হয়েছে। কেননা ৫/৬ হাজার টাকা মণের পেঁয়াজের বীজ এবার তা কিনতে হয়েছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায়। আবার সকল প্রকার সারের বস্তা প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন’শ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। কীটনাশকেও একই অবস্থা ।
পেঁয়াজ চাষী পিংকু বলেন, এবার ৪০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। পেঁয়াজ চাষসহ কয়েক রকমের ফসল আছে তার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট থেকে কোন প্রকার শু-পরামর্শ বা সহযোগীতা পাননি। তবে চাষকৃত পেঁয়াজের বাজার মূল্য ৩০০০ টাকার নিচে বিক্রি করলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে তাকে।
লিটন বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে এবার ফসল নষ্ট হয়েছে বেশী। পেঁয়াজে ফুফরি নামক রোগ আক্রমণ করছে। কৃষি অফিসের সহযোগীতা না পেয়ে স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে তাদের কথা মতই আমরা ফসলে বালাই নাষকসহ সার প্রয়োগ করছি। এতে আমাদের উৎপাদন ব্যয বাড়ছে।
পেঁয়াজ চাষী ভুট্টু বলেন, এবার মোট ১০ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছি। রোগবালাইয়ের কারণে দুঃশ্চিন্তায় ভূগছি। সব কিছুর দাম উদ্ধমূখী থাকার কারনে খরচের হারটাও এবার বেশী। তারপর সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের জন্য কোান প্রকার ভর্তুকির ব্যবস্থা নেই। নেই কোন সময়োপযোগী পরামর্শদাতা ও সহযোগীতা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। এবার ঈশ্বরদীতে ৯২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করছে কৃষকরা। গ্রীষ্ম ও শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দিয়ে সহযোগীতা করছি। এবার পেঁয়াজের ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি কৃষকরা লাভবান হবে।