ঈশ্বরদীতে এখন যে দুইজন শীর্ষ দূর্নীতিবাজ কর্তা ব্যক্তি রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ঈশ্বরদী পৌরসভার দূর্নীতিবাজ সচিব জহুরুল ইসলাম। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর এবং সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী (বাঘা-চারঘাটের পলাতক এমপি) শাহারিয়ার আলমের ঘনিষ্ট সহচর ও নিকটাত্বীয় সচিব জহুরুল ইসলাম এখনও ঈশ্বরদী পৌরসভায় বহাল তবিয়তে! সব সেক্টরকে ম্যানেজ করে শুধু বহাল তবিয়তেই নয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পৌর মেয়রের ব্যবহৃত দুটি প্রাডো ও জিপ গাড়ী নিয়ে। যা নিয়ম বহিঃভূত বলে জানিয়েছেন পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এরমধ্যে একটি গাড়ী অন্য একজন কর্মকর্তার বাচ্চাকে বিদ্যালয়ে আনা নেওয়ার কাজেও ব্যবহার করতে দেখা যায়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের পুরোটা সময় এই দূর্নীতিবাজ ও চতুর সচিব জহুরুল ইসলাম ঈশ্বরদী পৌরসভায় লুটপাট করে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। পৌরসভাটাকে নিজের বাপের সম্পত্তি মনে করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন সচিব জহুরুল ইসলাম। শুধু শাহারিয়ার আলমই নয়, রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক রিন্টুরও ঘনিষ্ট আত্মীয় তিনি। শুধু আত্বীয় বললে ভূল হবে ঈশ্বরদী পৌরসভায় বড় বড় কাজের ঠিকাদারের অংশীদারও তিনি। সম্প্রতি দূর্নীাতবাজ জহুরুল ইসলামের এসব অপকর্ম সম্বলিত নানা ছবিসহ তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। যা ধামাচাপা দিতে নিজেকে বিএনপির লোক দাবি করে ঈশ্বরদীর কতিপয় বিএনপি নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

সূত্র জানায়, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম ও রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রিন্টুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঈশ্বরদী পৌরসভার আরেক দূর্নীতিবাজ (বরখাস্ত) মেয়র ইসাহক আলী মালিথাকে ‘বস’ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। যা দিয়ে রাজশাহী ও ঢাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। পৌরসভার একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন বড়বড় প্রকল্প নিয়ে আসার নামে ঈশ্বরদী পৌরসভার ফান্ড থেকে নামে বেনামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। তার অনেক বন্ধু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এমন প্রচারনা চালিয়ে সাবেক মেয়র ইসাহাক আলী মালিথার কাছ থেকে পৌরসভা ফান্ডের এই বিপুল পরিমান টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। যা পৌরসভার হিসাব রক্ষক তাইবুর রহমান ও প্রধান সহকারী মাসুদুল আলম অন্যতম সহযোগী ও স্বাক্ষী। ঈশ্বরদী পৌরসভার হিসাব রক্ষক তাইবুর রহমান লালপুরের বাসিন্দা হওয়ায় তার সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে পৌরসভা ফান্ডের টাকা লুট করে চলেছেন তিনি। একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, আওয়ামীলীগ পালিয়ে গেলেও ঈশ্বরদী পৌরসভায় তার দোসররা এখনও বীরদর্পে সংশ্লিষ্ট চেয়ারে অধিষ্ট রয়েছেন। পৌরসভার প্রতিটি শাখা প্রধান আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী দোসর। তাদের ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করছেন বিএনপি নেতারা।
অভিযোগ রয়েছে ঈশ্বরদীতে সচিব জহুরুল ইসলাম একটি আওয়ামী বলয় তৈরি করেছেন। যার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। ৯৩ ব্যাচের মাধ্যমে তিনি আওয়ামীলীগ পুর্নবাসনের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি যাদের সাথে উঠাবসা করেন তারা সবাই আওয়ামীলীগের লোক।
এদিকে ঈশ্বরদী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম নয়নকে কৌশলে পরাজিত দেখানো হয়। যার নেপথ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ঈশ্বরদী পৌরসভার দূর্নীতিবাজ সচিব ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা শাহারিয়ার আলমের ঘনিষ্ট আত্মীয় মোঃ জহুরুল ইসলাম। ক্লীন ইমেজের মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নয়ন যাতে কোন ভাবেই নির্বাচনের মাঠে দৌড়াতে না পারে সেজন্য অপসারণ হওয়া সাবেক দূর্নীতিবাজ মেয়র ইসাহক আলী মালিথা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম লিটনের সাথে নির্বাচনের আগে দফায় দফায় বৈঠক করেন সচিব জহুরুল ইসলাম। বেশিরভাগ গোপন বৈঠক গুলো সম্পন্ন করেন চতুর সচিব জুহুরুল ইসলামের ষ্টেশন রোডের ১০ তলার (নান্নু বিহারীর) ভাড়া বাড়িতে। যার স্বাক্ষী ঈশ্বরদীর দুজন সুবিধাবাদী পত্রিকার সম্পাদক। শুধু ষড়যন্ত্র করেই ক্ষান্ত হননি, যার সফল বাস্তবায়নেও প্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করেন তিনি। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন, কতিপয় দূর্নীতিবাজ সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করেছিলেন তিনি ইসা মালিথার পক্ষে। অভিযোগ রয়েছে রাতের আঁধারে পৌরসভার প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে অবৈধ টাকা পৌছে দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম লিটন ও সচিব জহুরুল। তাদের অস্থায়ী অফিস ছিলো সুগারক্যান রেষ্ট হাউজ। যেটি নিয়ন্ত্রন করতেন রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক রিন্টু। সেই সময় তার প্রকাশ্যে ঘোষণা ছিল বিএনপি’র কাউকে পৌরসভায় মেয়র বা কাউন্সিলর হতে দিবেন না। এজন্য প্রতিটা ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে পৌর মেয়র প্রার্থী ইসাহক মালিথাকে গোপন চুক্তিও করিয়ে দিয়েছিলেন দূর্নীতিবাজ সচিব জহুরুল ইসলাম। যার বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছিলেন লাখ লাখ টাকা। গত ৫ আগষ্টের পূর্বে দূর্নীতিবাজ মেয়র ইসাহক মালিথার সাথে প্রকাশ্যে আঁতাত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পৌরসভা থেকে। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তাইবুর রহমানকে ধরে রিমান্ডে নিলেই যার প্রমাণ পাওয়া যাবে। অবিলম্বে পৌর সচিব জহুরুল ইসলামকে আটক করে আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সৌপর্দ করার জোর দাবী জানিয়েছেন ঈশ্বরদী পৌরবাসী।