দীর্ঘদিন মসজিদ এবং কেন্দ্রীয় গোরস্থানের দ্বায়িত্ব পালনের পর কোনপ্রকার হিসেব না দিয়েই হঠাৎ দ্বায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেওয়ায় অত্র প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
অর্থ আত্মসাৎ এর এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্থান এবং মসজিদের সাবেক কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. হায়দার আলী এবং সাধারণ সম্পাদক মুহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
আত্মসাৎ হওয়া সকল অর্থ উদ্ধার এবং আত্মসাৎ কারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে শুক্রবার সকালে নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে মতবিনিময় করেছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায় , ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্থান মসজিদ ও গোরস্থান কমিটি দুই বছরের মেয়াদে ২০১৭ সালে গঠিত হয়। কিন্তু নিয়ম থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে এলাকার সাধারণ মানুষকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর অতিবাহিত বিতর্কিত এই কমিটির সদস্যরা। তাদের ক্ষমতাকালে কমিটির অন্যান্য সদস্য ও এলাকাবাসী বহুবার প্রতিষ্ঠান দুটির হিসেব প্রদান করে স্বচ্ছতা রাখার কথা বললেও বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন অভিযুক্তরা বলে আলোচনা সভায় একাধিক সদস্য তাদের বক্তব্যে নিশ্চিত করেন।
তারা আরও বলেন, ক্যাশিয়ার মো. হায়দার আলী সরদার, সাধারণ সম্পাদক (গোরস্থান) মো. মহিদুল, জয়েন সেক্রেটারি (গোরস্থান) মো. বাঁকি মেম্বারদের কাছে গোরস্থান এবং মসজিদ তহবিলের হিসেব চাইলেই তারা নানা টালবাহানা করত। তবে তাদের সেই টালবাহানা যে প্রতারণার রুপ নিয়ে প্রতিষ্ঠান গুলোর লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার পায়তারা করছে তা এখন অনেকটাই পরিষ্কার বলেও জানান তারা।
অপরদিকে নওদাপাড়া কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক মো. মহিদুল সদস্য মো. আজিজ বিশ্বাস এলাকার হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিকট থেকে মসজিদের উন্নয়নের নামে টাকা উত্তোলন করে। সেই সাথে অনেকের নিকট থেকে মসজিদের মাটি ভরাট বাবদ অতিরিক্ত আরও ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেছে। এভাবে প্রায় সাত বছর অতিবাহিত হলেও কোন দাতা সদস্যদের মাঝে উত্তোলিত টাকার হিসাব দেওয়া হয়’নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগকারী মতিন সরদার ও নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতি আলাউদ্দিন দেওয়ান সংবাদ ভূমিকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী গোরস্থান মসজিদ ও গোরস্থানের খাতওয়ারি সঠিক হিসাব নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও দূর্নীতিবাজদের প্রতারণার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
এলাকাবাসী সংবাদ ভূমিকে আরও জানায়, নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদ ও কেন্দ্রীয় গোরস্থানের কমিটির মো. হায়দার আলী সরদার, মো. মহিদুল , মো. বাঁকি মেম্বার, মো. আজিজ বিশ্বাস সহ আরো অনেকেই দুর্নীতিপরায়ন ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও পেশি শক্তির ক্ষমতা বলে স্পর্শকাতর বিষয় মসজিদ ও কবরস্থানের অর্থ আত্মসাৎ করার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
পরিশেষে পূর্বের সমালোচিত কমিটি বাতিল করে আলোচনা সভায় এলাকাবাসীর সর্বসম্মতিক্রমে ১৪ সদস্যের একটি খসরা কমিটি গঠন করা হয় । এ কমিটিতে মো. আলাউদ্দিন দেওয়ান, মো. আখতারুল সরদার, মো. নূর মুহাম্মদ, মো. আব্দুল কাদের, মো. আনোয়ারুল, মো. হায়দার আলী, মো. তানভির কবির শিখন, মো. আলিামিন, মো. সাকিল, মো. মাসুম, মো. সুমন হোসেন, মো. হাসান, মো. তুহীনসহ আরো অনেকেই ।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবারের খসরা কমিটির মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের হিসাব গ্রামবাসীর মাঝে উপস্থাপন করতে হবে অন্যথায় ঈশ্বারদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হবে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের সংবাদ ভূমিকে বলেন, বিগত দিনের কোন হিসেব আমার কাছে নাই। আমাকে কাঠের পুতুল করে বাঁকি এবং মহিদুল গোরস্থান এবং মসজিদের সকল হিসাব তারাই দেখতো। তাদের থেকে কোন কিছু জানতে চাইলে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটাত।
গোরস্থান কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. হায়দার আলী সরদার সংবাদ ভূমিকে বলেন, আমার কাছে কোন হিসাব নাই। আমাকে শুধু ব্যাংক চেক দিয়ে সেটাতে স্বাক্ষর করতে বলতো আমি স্বাক্ষর করতার এর বেশি কিছু আমি জানি না।
সাধারণ সম্পাদক (গোরস্থান) মো. মহিদুলকে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগে চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
যুগ্ন সম্পাদক (গোরস্থান) মো. ফিরোজ হোসেন বাঁকির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ফোনের লাইন কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।
দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বকুল সরদারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঈশ্বারদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ সংবাদ ভূমিকে বলেন, নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদ ও কবরস্থানের ক্যাশিয়ার ও সাধারণ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে সঠিক হিসাব না দেয়া ও অর্থ আত্মসাৎ করার মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়ে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।