চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে পুরো দেশব্যপী অঝোড় ধারায় ঝড়ছিল বৃষ্টি। রাতদিন লেগে থাকা এই বৃষ্টির বারিধারায় তলিয়ে গেছে কৃষকের আমনের ক্ষেত, শীতের আগাম সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেঁড়স, পটল,বেগুন, মরিচ, পেঁপে, শষা,মুলা, করলা এবং শিমের চাতাল। তবে মাঠ ঘাটের পানি শুকাতে শুরু করেছে ইতো মধ্যেই। সবজিব ক্ষেতে আটকে থাকা এই পানি শুকানোর সাথে সাথে জলাবদ্ধ জমির সবজি গুলোও শিকড় পঁচে শুকাতে শুরু করেছে। এতে অধিক লোকসানের দৃশ্যমান ভবিষ্যতের হাতছানিতে শবজি চাষীদের দুঃশ্চিন্তার ভাজ পড়ছে কপালে।
ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী, বক্তারপুর, দাদপুর,আওতাপাড়া, কদিমপাড়া, নওদাপাড়া, জয়নগর, মিরকামারী, সিলিমপুর, আড়কান্দি, রামনাথপুর, বালিয়াডাঙ্গা,মুলাডুলিসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সবজি ক্ষেতের এমনই দৃশ্য দেখা গেছে।
ভাড়ইমারী বড়বটতলা এলাকার কৃষক মোঃ নাসির হোসেন বলেন, প্রতিবারের মত এবারও আগাম জাতের ফুল ও বাধাকপি করে ছিলাম প্রায় ৪ বিঘা। ফুল কপিতে গুটিও হয়েছিলো। হয়ত আর দিন পনেরো গেলেই বিক্রির উপযোগী হয়ে যেত। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ২ বিঘা গাজর করেছিলাম । সেটাও ধুয়ে গেল বৃষ্টির পানিতে।
খেড়ের দাইড় এলাকার কৃষক মজনু মিঞা বলেন, আল্লার সাথে তো আর পাল্লা করা যায় না । তাই, যা ভাগ্যে ছিল তাই হয়েছে। এ মৌসুমে মূলা আর আগাম ফুল কপি চাষ করতে সার বিষের দোকানেই বাকি ৬০ (ষাট) হাজার টাকা। কামলার মজুরী নিজের খাটুনির তো কোন হিসাবই নেই। এই ঘারতি পোষাবো কেমনে সেটা কেবল আল্লাহ্ জানে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শিমের চাষ হয়েছে।
শিমচাষের স্বর্গরাজ্য খ্যাত মুলাডুলি ইউনিয়নের রামনাথপুর, মুলাডুলি, পতিরাজপুর, বেতবাড়িয়া,বাঘহাছলা, রামেশ্বাহপুর, গোয়াল বাথান, লক্ষীকোলা, সড়াইকান্দি, শেখপাড়া, নেকড়হাটা, অঞ্চল ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিচতলা তৈরী, শিমের মাচানের জন্য বাঁশ, পাঠকাঠি, লোহার তার, পাটের সুতা, পর্যাপ্ত কীটনাশক, সার এবং উপযুপরি শ্রমিকসহ শিম চাষে বিঘা প্রতি ১ মৌসুমে খরচ হয় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এবার টানা বৃষ্টির কারনে শিমের জমিতে পানি আটকা ছিলো অনেক দিন। এখন পানি নামার সাথে সাথে গাছ গুলো শুকাতে শুরু করেছে। যে হারে গাছ মারা যাচ্ছে তাতে করে প্রায় অর্ধেকের বেশী শিমগাছ নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি। আর বেঁচে থাকা বাকি অর্ধেক গাছও তেমন ফল দেবে বলে কোনো ভাব পাচ্ছি না।
কৃষক ইমরান জানান, অতি খড়ায় মার খেলাম করলা আর শষা চাষে। ঢেঁড়সেও তেমন কিছু করতে পারি নি। এবার শীতের সবজি করতে গিয়েও বৃষ্টির পানি আমাদের সাথে শত্রুতা করে বসল। আমাদের ক্ষেতের শিমগাছ অর্ধেকের বেশি মরে গেছে। এবার কীটনাশকসহ বাকীদের ঋণ শোধ করব কিভাবে সেই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতারানী সরকার বলেন, গাছের গোড়ায় অধিক সময় জলাবদ্ধতার কারণে গাছের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ গাছ গুলোকে রক্ষা করা না গেলেও যেগুলো এখনো বেঁচে আছে সেগুলোতে ছত্রাক নাশক (পঁচন রোধক) স্প্রে করতে হবে।