পাবনার ঈশ্বরদীর মাঠের পর মাঠ জুরে ছিলো সবুজের সমারোহ। আমন ধান আর মৌসুমি সবজির বাহারি সমারোহে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করত এ অঞ্চলের কৃষান কৃষানী। সেই শাঠ ভরা ফসল ঘিরে যেখানে অধিক লাভের আশায় রঙিন স্বপ্ন বুনছিলো কৃষানী কন্যা । গত তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারনে সেই স্বপ্ন এখন তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে।
গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ঈশ্বরদী উপজেলায় তলীয়ে গেছে রাস্তা ঘাট, হাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা। কৃষকের আমনের ক্ষেত ও সবজিব বেড। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। এতে করে ব্যপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
উপজেলার পাতিলা খালি, অরণকোলা, পতিরাজপুর, বাঘহাছলা, রামনাথপুর, মুলাডুলি, মারমি, সুলতানপুর, শেখপাড়া অঞ্চলগুলোর বিভিন্ন স্থানে ক্ষতির এমন দৃশ্য দেখা যায়।
পৌর শহরের পাতিলা খালি এলাকার মো: তুহিন হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারনে আমাদের এলাকার আবাদি ধানের জমিসহ প্রায় শতাধিত বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এলাকাবাসী এই জলাবদ্ধতার জন্য পৌর সভার পানি নিষ্কাশনের অব্যাবস্থাপনাকে দোষােেরাপ করেন।
অরণকোলা মাঠের ধান চাষী ইসহাক দেওয়ান বলেন, গত কয়দিনের বৃষ্টিতে আমাদের এই মাঠের প্রায় ৪শত বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট গুলো বন্ধ করে অপরিকল্পিত পুকুর আর ফসলি জমিতে ইন্ডাস্ট্রি করার কারনে গত কয়েক বছর এ মাঠে জমির ধান আমরা ঘরে নিতে পারি না।
বাঘহাছলা এলাকার সিদ্দিক বলেন, আমার ৯৩ শতাং জমির ধান পুরো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দু-এক দিনের মধ্যে না নামলে পুরো জমির ধান টাই নষ্ট হয়ে যাবে। এতে সারা বছরে বড় এখটা দেনার মুখে পড়তে হবে আমাকে।
বালিয়াডাঙ্গ এলাকার মাছচাষী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমার ৮ বিঘা পুকুর ও ৭০ শতাং ঘের ভেসে গেছে। বাশের বানা আর বাজারের কেনা জাল দিয়ে কোন রকমের আটকাতে পেরেছি। তবে তার আগেই সব শেষ!
পতিরাজপুর এলাকার কৃষক এবং মাছচাষী কবির হোসেন বলেন, পুরো মাঠের ধান পানির নিচে। যেদিকে তাকাই শুধু অথৈ পানি। পানিকে চারিদিকে সাদা হয়ে গেছে। আমার ৬ বিঘা ধানের সাধে কয়েকটি পুকুরের পাড় ভেঙ্গে কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। আমি জানিনা আমি কিভাবে এই ক্ষতি পুশিয়ে নেব। আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপায় আমার জানা নেই।
রামনাথপুর এলাকার চাষী ইমরান হোসেন বলেন, মাত্র ৬৮ শতাংশ জমি আমার। তাও বর্গা নিয়া চাষ করে কোন রকম ডাল ভাতের ব্যবস্থা চলে এবার বুঝি সেটাও গেল।
মারমীর চাষী শাকিল বলেন, অন্যান্য বারের চাইতে এবার সবচাইতে বেশী দামে কামলা দিয়ে ধান লাগাই ছিলাম তাও আবার ড্যুবে পানিতে। সার বিষের যে দাম। শোধ করব কিভাবে তাও জানা নাই।
তবে অধিকাংশ কৃষকই বলেছেন, এই মাঠ গুলোর পানি নিষ্কাশন করা না হলে ডুবে যাওয়া সকল জমির ধান নষ্ট হয়ে যাবে। এ জন্য কমলা নদীর যে উপশাখাটি সরকারী ব্যবস্থাপনায় বারবার খনন করার পরও যারা দখল করে পানি আটকে আমাদের জমি গুলোর ফসল নষ্ট করছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার বলেন, বৃষ্টিতে প্লাবিত ক্ষেতের খবর আমি রেখেছি। প্লাবিত এলাকার পানি তিন চার দিসের মধ্যে নেমে গেল ধানের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তবে পানি যদি বের হতে না পারে তবে সে জন্য কৃষকদের একত্রিত হয়ে পানি বের করার ক্যানাল গুলো পরিষ্কার করতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিস এবং উপজেলা প্রসাশন কৃষকের সার্বিক সহযোগীতা করবেন।